এই সময়কে তথ্যপ্রযুক্তির সময় বলা হয়। শুধুপ্রযুক্তি থাকলেতো হবে না, তার নানা উপাদান থাকতে হয়। সেসব উপাদানের কারণেই প্রযুক্তি হয়ে ওঠে মানুষের বন্ধু।তথ্যপ্রযুক্তির বিশাল জগতে নানা বিষয় যোগ করেছেন কিছু মানুষ।তাঁদের সৃজনশীল উদ্ভাবনই রাঙিয়ে দিয়েছে আজকের সময়।
বিল গেটস
তিনি স্বপ্ন দেখেন স্বপ্ন দেখান
তিনিই তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্বের সবচেয়ে আলোচিত মানুষ, সবচেয়ে পরিচিত নাম। উইলিয়াম হেনরি গেটস থ্রি—বিল গেটস নামেই বেশি পরিচিত। পৃথিবীর শীর্ষ সফটওয়্যার নির্মাতা মাইক্রোসফট করপোরেশনের চেয়ারম্যান। কম্পিউটারের মানে যখন বিরাট কিছু, বড় বড় গবেষণাকেন্দ্র আর গুরুত্বপূর্ণ জায়গা ছাড়া এই বিরাট যন্ত্রটির দেখা মিলত না যে সময়, তখন এই স্বপ্নচারী স্বপ্ন দেখেছিলেন কম্পিউটারকে ‘পার্সোনাল’ করার। হিসাব কষার কাঠখোট্টা আর ভারিক্কি এই বিশাল যন্ত্রটাকে ঘরের উপযোগীকরায় বিল গেটসের অবদানই বেশি। তিনি সব সময় বলেন, ‘স্বপ্ন দেখতে হয়, এ ছাড়া লক্ষ্যে পৌঁছানো যায় না।’ তিনি তাঁর স্বপ্ন ছুঁয়ে বদলে দিয়েছেন সমগ্র পৃথিবীর অগ্রযাত্রার পথ।
সফটওয়্যারের প্রায় সব ক্ষেত্রেই বিচরণ আছে বিল গেটসের মাইক্রোসফট করপোরেশনের। তবে শুরুটা ছিল অপারেটিং সিস্টেম দিয়ে। আধিপত্যও সেখানেই। কম্পিউটারের সবচেয়ে জনপ্রিয় অপারেটিং সিস্টেম উইন্ডোজের প্রণেতা বিল গেটস। অপারেটিং সিস্টেম নিয়ে তিনি কাজ শুরু করেছিলেন ১৯৭৫ সালে। একটা সাময়িকপত্রে তখনকার সর্বশেষ প্রযুক্তির মিনি কম্পিউটার অ্যালটায়ার ৮৮০০-এর বিবরণ পড়ে তিনি বুঝতে পেরেছিলেন কম্পিউটারের সম্ভাবনার কথা। বন্ধু পল অ্যালেন আর তিনি এই কম্পিউটারের জন্য আরও ভালো সফটওয়্যার তৈরি করার কথা ভাবলেন, যদিও কম্পিউটার সম্পর্কে তখনো তেমন কোনো ধারণাই ছিল না তাঁদের। কিছু করার ইচ্ছাশক্তির বলেই বিল আর পল মিলে অলট্যায়ার কম্পিউটারের জন্য তৈরি করলেন অলট্যায়ার বেসিক নামের একটি অপারেটিং সিস্টেম। সেই থেকেই শুরু। ছেড়ে দিলেন হার্ভার্ডের পড়াশোনা। সে বছরই বিল প্রতিষ্ঠা করলেন মাইক্রোসফট, সঙ্গে ছিলেন পল। তখনই বিল সফটওয়্যারের স্বত্বের বিষয়টি নিয়ে চিন্তা শুরু করেন। তিনি বুঝতে পারলেন, ব্যবসায়িক ভিত্তি শক্ত না হলে এ নিয়ে দাঁড়ানো যাবে না। এরপর আইবিএমের সঙ্গে অংশীদারির ভিত্তিতে তৈরি করলেন আরেক অপারেটিং সিস্টেম, কিউডস। এর পরবর্তী সংস্করণ এমএস-ডস মাইক্রোসফটকে পরিচিত করে তোলে সারা বিশ্বে। ১৯৮৫ সালে আইবিএমের সঙ্গে যৌথভাবে মাইক্রোসফট বাজারে আনে উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমের প্রথম সংস্করণ, ওএস/২। Windows 95, 98, 2000, NT, ME, XP, VISTA, SEVEN—এসবের কারণেই তো মানুষের সঙ্গে কম্পিউটারের সখ্য বেড়ে উঠেছে।
ফোর্বস ম্যাগাজিনের করা তালিকায় ১৯৯৫ সাল থেকে টানা ২০০৭ পর্যন্ত এবং ২০০৯ সালে বিল গেটস ছিলেন পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি। তিনিই প্রথম প্রমাণ করেছেন মেধানির্ভর ব্যবসা দিয়েও ধনকুবের হওয়া যায়। পাশাপাশি বিল ও তাঁর স্ত্রী মেলিন্ডা মিলে গঠন করেছেন দাতব্য সংস্থা বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন। এখন তিনি বেশি সময় দিচ্ছেন মানবসেবামূলক কাজে।
গর্ডন আরলে মুর
গতির জাদুকর
যেকোনো ডিজিটাল যন্ত্রের প্রাণ হচ্ছে মাইক্রোচিপ। মাইক্রোচিপ না হলে এত ছোট কম্পিউটার আদৌও তৈরি করা যেত না। আর এটি সম্ভব হচ্ছে ইন্টেল করপোরেশন (ইনটিগ্রেটেড ইলেকট্রনিক্স করপোরেশন) নামের জনপ্রিয় মাইক্রোচিপ ও মাইক্রোপ্রসেসর তৈরিকারক প্রতিষ্ঠানের কারণে। আর এ প্রতিষ্ঠান যাঁরা তৈরি করছেন, তাঁদের অন্যতম গর্ডন আরলে মুর; যিনি সবার কাছে মুর হিসেবে বেশি পরিচিত। গর্ডন মুর ১৯২৯ সালের জানুয়ারি মাসের ৩ তারিখে আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের সানফ্রানসিসকো শহরে জন্মগ্রহণ করেন। ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়নে স্নাতক ডিগ্রি নেন।এরপর তিনি ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (ক্যালটেক) থেকে রসায়ন ও পদার্থবিজ্ঞানে পিএইচডি ডিগ্রি গ্রহণ করেন। মুর তাঁর কর্মজীবন শুরু করেন ট্রানজিসটরের জনক উইলিয়াম শকলের সঙ্গে বেকম্যান ইনস্ট্রুমেন্টস প্রতিষ্ঠানে। ১৯৬৮ সালে গর্ডন মুর রবার্ট নায়েসের সঙ্গে ইন্টেল করপোরেশন প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমানে পারসোনাল কম্পিউটারে যে এক্স৮৬ সিরিজের প্রসেসর ব্যবহার করা হয়, তা ইন্টেল প্রথম বাজারে আনে।
গর্ডন মুর কম্পিউটার হার্ডওয়্যারের ইতিহাসে একটি ধারার তত্ত্ব দিয়েছেন। তাঁর মতে, একটি নির্দিষ্ট চিপের মধ্যে ট্রানজিসটরের সংখ্যা প্রতি দুই বছরে দ্বিগুণ হবে, তবে এর আকার বাড়বে না। মুর এ তত্ত্ব দেন ১৯৬৫ সালে,যা কি না মুর’স ল নামে পরিচিত। মুরের এ তত্ত্ব শুধু আকারের জন্য ব্যবহূত হয় না। এ তত্ত্ব মাইক্রোচিপ বা প্রসেসরের উপাত্ত প্রক্রিয়া করার গতি ও মেমোরি—এমনকি ডিজিটাল ক্যামেরার পিক্সেলের সঙ্গেও সম্পর্কযুক্ত। তাঁর এ তত্ত্বের ওপর ভিত্তি করে মাইক্রোচিপ নির্মাতাপ্রতিষ্ঠানগুলো তাদের মাইক্রোচিপভিত্তিক গবেষণার লক্ষ্য স্থির করে। ইলেকট্রনিক্সের জগতে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বর্তমান সময়ের ডেস্কটপ কম্পিউটারের আকার ছোট হওয়ার অন্যতম কারণ এ প্রযুক্তিবিদ। ২০০১ সালে মুর ও তাঁর স্ত্রীর প্রযুক্তি উন্নয়নের জন্য ক্যালটেককে ৬০ কোটি ডলার অনুদান দেন, যা কি না এখন পর্যন্ত কোনো বিশ্ববিদ্যালয়কে দেওয়া সবচেয়ে বড় ডোনেশন। মুর বর্তমানে ইন্টেলের চেয়ারম্যান এমিরেটাস হিসেবে কাজ করছেন।
রিচার্ড স্টলম্যান
মুক্ত করো ভয়
২০০৬ সালের আগস্ট মাসে ভারতের কেরালা অঙ্গরাজ্যে আসেন এক মোটামতো, ঝাঁকড়াচুলের বক্তা। রাজ্যসরকারের সঙ্গে তাঁর আলোচনার বিষয় শিক্ষার্থীদের কম্পিউটারের স্বাধীনতা। একটি প্রযুক্তি যদি ভালোভাবে শিখতে হয় তবে জানতে হবে সেটি কীভাবে কাজ করে, তার খোলনলচে পাল্টে ফেলার ক্ষমতা থাকতে হবে, থাকতে হবে নিজের পছন্দের প্রযুক্তি বন্ধুদের সঙ্গে বিনিময় করার স্বাধীনতা। যদি প্রযুক্তি থাকে বাক্সবন্দী, যদি তা শিক্ষার্থীদের জ্ঞানান্বেষণকে উন্মুক্ত ও অবারিত করতে না পারে তাহলে একটি জ্ঞানভিত্তিক সমাজ কীভাবে বিনির্মিত হবে? কেরালা সরকার তাঁর এই যুক্তিগুলোকে মেনে নেয়। পরের কয়েক মাসে দেখা গেল, কেরালার ১২ হাজার ৫০০ বিদ্যালয়ের কম্পিউটার ল্যাবগুলো চলতে থাকল লিনাক্স ও মুক্ত সফটওয়্যার দিয়ে। শিক্ষার্থীদের কাজে উন্মুক্ত হলো বিশ্বের অন্যতম সেরা সফটওয়্যারের প্রোগ্রামিং সংকেত! ঝাঁকড়া চুলের এই মোটামতো ব্যক্তিটিই মুক্ত সফটওয়্যার আন্দোলনের পুরোধা, মুক্ত সফটওয়্যার ফাউন্ডেশনের জনক রিচার্ড ম্যাথিউ স্টলম্যান, কম্পিউটার বিশ্বে যিনি সংক্ষেপে আরএমএস নামে পরিচিত।
কম্পিউটার বিপ্লবের সূচনালগ্নে বড় আকারের বিভিন্ন কম্পিউটার ছিল একেবারে স্বতন্ত্র। একটির সঙ্গে অন্যটির যোজন যোজন পার্থক্য। ফলে এক কম্পিউটারে লেখা প্রোগ্রাম অন্য কম্পিউটারে সরাসরি চালানো যেত না। এ জন্য প্রোগ্রামাররা তাঁদের প্রোগ্রামিং সংকেতই সবাইকে দিয়ে দিতেন, যাতে করে প্রয়োজনীয় পরিবর্তনটুকু করে কম্পাইল করে সেটি আবার ব্যবহার করা যায়। পরে ১৯৭০-এর শেষ দিকে এবং ১৯৮০-এর দশকের প্রথম দিক থেকে যখন কম্পিউটার প্ল্যাটফরমের মধ্যে একটি সমঝোতা হলো, তখন থেকে দেখা গেল, কেউ কেউ আর প্রোগ্রামিং সংকেত না দিয়ে সরাসরি চালু করা যায় এমনভাবে ফরম্যাটের প্রোগ্রাম বিনিময় শুরু করেছেন। শুরু হয়েছে প্রোগ্রামের স্বত্বাধিকার। এই ঘরানা কম্পিউটার ব্যবহারকারীর স্বাধীনতাকে খর্ব করতে শুরু করে। সে সময় এমআইটিতে কাজ করতেন স্টলম্যান। তিনি দেখলেন, এভাবে চলতে থাকলে একসময় প্রযুক্তির কোনো নিয়ন্ত্রণই সাধারণ মানুষের হাতে থাকবে না, চলে যাবে কিছু মুনাফালোভী করপোরেট প্রতিষ্ঠানের হাতে। চাকরি ছেড়ে দিয়ে তখন তিনি শুরু করলেন জনগণের জন্য জনগণের সফটওয়্যার বানানোর আন্দোলন। মুক্ত সফটওয়্যার আন্দোলন শুরু হলো।
মুক্ত দর্শনের আর একটি বড় উদাহরণ উইকিপিডিয়া, গণমানুষের বিশ্বকোষ। ১৯৯৯ সালে রিচার্ড স্টলম্যান প্রস্তাব করেন একটি বিশ্বকোষ সবাই মিলে লিখে ফেলার, সাধারণ মানুষ থেকে পণ্ডিত পর্যন্ত। তবে তাঁর সে কাজ ততটা গতি পায়নি যত দিন না জিমি ওয়ালেস সেই ধারণাটি কাজে নামিয়ে দিলেন। জিমি ওয়ালেসের হাত ধরে বিকশিত হয়েছে আজকের উইকিপিডিয়া।
১৯৫৩ সালের ১৬ মার্চ নিউইয়র্কে স্টলম্যানের জন্ম। নিজের জীবনের প্রায় সবটুকু তিনি উৎসর্গ করেছেন তাঁর গণমানুষের জন্য সফটওয়্যার দর্শন প্রচার ও বিকাশের জন্য। তাঁর কারণেই উন্মুক্ত হয়েছে প্রযুক্তি বিকাশের সোপান।
স্টিভ জবস
চৌকস ও সৃজনশীল
আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে—এই কথাটি যে মানুষটির সঙ্গে মিলে যায় তিনি হচ্ছেন অ্যাপল কম্পিউটারস ইনকরপোরেটেডের প্রধান নির্বাহী স্টিভ জবস। স্টিভেন পল(স্টিভ) জবস ১৯৫৫ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোনিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। পালক মা-বাবার কাছে বেড়ে ওঠা জবস কোনো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সনাতনী ডিগ্রি গ্রহণ করেননি। এক সেমিস্টার শেষ করেই তিনি বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের ইতি টানেন। পরবর্তী সময়ে তিনি জানান, যদি তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি শেষ করতেন, তাহলে তাঁর জীবনে অনেক কিছুই অন্যরকম হতো। জবস তাঁর প্রথম জীবন শুরু করেন প্রথম ভিডিও গেম নির্মাতা প্রতিষ্ঠান আটারির টেকনিশিয়ান হিসেবে। এর কিছুদিন পর জবস ও তাঁর বন্ধু ডেনিয়েল কটকে মিলে ভারতে ঘুরতে আসেন আধ্যাত্মিক শান্তি খোঁজার চেষ্টায়। এখানে তিনি বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করেন। ১৯৭৬ সালে স্টিভ জবস, স্টিফেন ওয়াজনিয়াক ও রোনাল্ড ওয়াইন মিলে অ্যাপল কম্পিউটার প্রতিষ্ঠা করেন। স্টিভ জবসের জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন ছিল ১৯৮৪ সালে প্রথম গ্রাফিকাল ইন্টারফেসসহ অ্যাপল কম্পিউটারের প্রবর্তন। পারসোনাল কম্পিউটারের ইতিহাসে এটি ছিল একটি স্মরণীয় অধ্যায়। এই কম্পিউটারের নাম দেওয়া হয় ‘ম্যাকিনটোস’ l Toy Story -ছবির মাধ্যমে কাজ করা যেত না।জবস এ কম্পিউটারগুলোকে পারসোনাল কম্পিউটার না বলে ইন্টারপারসোনাল কম্পিউটার নাম দেন। ১৯৮৫ সালে জবসকে তাঁর নিজের তৈরি করা প্রতিষ্ঠান অ্যাপল থেকে বহিষ্কার করা হয়। ১৯৮৬ সালে জবস পিক্সার নামে একটি গ্রাফিক্স ডিজাইন প্রতিষ্ঠান চালু করেন, যা বর্তমানে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ডিজিটাল অ্যানিমেশন তৈরির প্রতিষ্ঠান। ১৯৯৬ সালে জবস অ্যাপলে ফিরে আসেন এবং অ্যাপলের প্রধান নির্বাহী হিসেবে কাজ করতে থাকেন।
এরপর ধীরে ধীরে অ্যাপল কম্পিউটার ছাড়াও অন্যান্য ডিজিটাল যন্ত্র তৈরি শুরু করেন। আইপড নামে অ্যাপলের গান শোনার যন্ত্র গান শোনার অভিজ্ঞতাকে বদলে দিয়েছে। অ্যাপলের ম্যাকবুক ল্যাপটপ অনেক জনপ্রিয়। আইফোন আর একেবারে হাল আমলের আইপ্যাড সবকিছুতেই টের পাওয়া যায় অ্যাপলের সৃজনী উদ্যোগ।স্টিভ জবস কম্পিউটারকে সহজ, সুন্দর আর অনেকবেশি চৌকস করে তুলেছেন।
স্যার টিম বার্নার্স-লি
ভার্চুয়াল সংস্কৃতির স্রষ্টা
এই সময়ে এসে আধুনিক জীবনযাত্রায় ইন্টারনেট ছাড়া একটা দিনও চলে না। ইন্টারনেটই এখন বিশ্বের সবচেয়ে বড় তথ্যভান্ডার। পাশাপাশি ই-মেইল ও টেলিযোগাযোগের দ্রুত ও সাশ্রয়ী মাধ্যম। সত্যিকার অর্থে কোটি কোটি তথ্য বা ইন্টারনেট সাধারণ ব্যবহারকারীর কাছে দৃশ্যমান হয় কীভাবে?
ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব, সংক্ষেপে www। এই তিনটি ডব্লিউয়ের মাধ্যমেই ইন্টারনেট থেকে আমাদের মনিটরে ভেসে আসে কোটি কোটি পৃষ্ঠা। নানা বিষয়ের, নানা কাজের তথ্য থাকে সেসবে। ই-কমার্সের কারণে গোটা পৃথিবীতে অর্থনৈতিক চালিকা-শক্তি হয়ে উঠেছে এই ওয়েব।
ওয়েব যিনি উদ্ভাবন করেছিলেন, তিনি স্যার টিম বার্নার্স-লি। এখন এ কথা দ্বিধাহীন ছাড়াই বলা যায়, তথ্যপ্রযুক্তিকে জনপ্রিয় আর গুরুত্বপূর্ণ করে তুলতে ওয়েবের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি।
মার্চ ১৯৮৯। তিনি ভেবেছিলেন কীভাবে একজন গবেষক তাঁর কম্পিউটার থেকে অন্য গবেষকদের কম্পিউটারে নিজের লেখা দেখাতে পারেন। ভাগাভাগি করতে পারেন নিজেদের কর্ম। ১৯৯০ সালের ২৫ ডিসেম্বর বড়দিনে সফল হন টিম বার্নার্স-লি। সার্নের তরুণ এক ছাত্র রবার্ট কাইলিয়াওয়ের সহায়তায় প্রথম বারের মতো ওয়েবসাইট দেখাতে পারেন সার্নের অনেক কম্পিউটারে। কারিগরি ভাষায় বলা যায় ওইদিন টিম বার্নার্স-লি প্রথমবারের মতো ইন্টারনেটের মাধ্যমে এইচটিটিপি কায়েন্ট (কম্পিউটার) এবং সার্ভারের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপনে সফল হন। সার্নেই তৈরি হলো বিশ্বের প্রথম ওয়েবসাইট। সেই সাইটের নাম ছিল info.cern.ch। সেটিতে ঢুকতে পৃথিবীর প্রথম ওয়েবঠিকানাটা ছিল এমন— http://info.cern.ch/hypertext/WWW/TheProject.html। ১৯৫৫ সালে লন্ডনে জন্মগ্রহণকারী স্যার টিমোথি জন ‘টিম’ বার্নার্স-লি ওয়েবের জন্ম দিয়েই থেমে নেই। এখনো তিনি লালন করছেন ডব্লিউডব্লিউডব্লিউকে। প্রকৌশলী ও কম্পিউটার বার্নার্স-লি এখন ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব কনসোর্টিয়ামের পরিচালক। এ সংস্থার কাজ হচ্ছে প্রতিনিয়ত ওয়েবের উন্নয়ন। তিনি ওয়েবসাইট ব্যবহারকারীদের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করেন। তাই তো বলেন, ইন্টারনেট সেবাদাতারা পর্যবেক্ষণ করতে পারবে না যে ব্যবহারকারী কখন কোন ওয়েবসাইট দেখছে। সংযোগ দেওয়ার সময় এমন কোনো প্রযুক্তি রাখা যাবে না, যাতে ব্যক্তিস্বাধীনতা খর্ব হয়। এই বিজ্ঞানী আজও আছেন ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর পক্ষে।
0 comments:
Post a Comment